
নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীতে বিএনপির সাবেক এক নেতাকে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। নিহত মো. আলাউদ্দিন (৫৫) পবা উপজেলার ভুগরইল এলাকার জমির উদ্দিনের ছেলে ও নওহাটা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি।
গত মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দিনগত রাত ১টার দিকে পবা উপজেলার ভুগরইল এলাকায় নিজ বাসায় তাকে গুলি করা হয়। পরে বুধবার (১৫ জানুয়ারি) বেলা পৌনে ৩টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় বুধবার রাতে মহানগরীর শাহমখদুম থানায় ৭জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হলেও সেই মামলায় প্রকৃত হত্যাকারীদের বাদ দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা চালাচ্ছে একটি গোষ্টি বলে অভিযোগ উঠেছে।
পিতা হত্যা ঘটনায় শাহমখদুম থানায় ছেলে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন মিন্টুর করা মামলা সুত্রে জানা যায়, পূর্ব শত্রুতার জেরে মঙ্গলবার দিনগত রাতে সেহাগ, শিপলু, শিমুল,ওবায়দুল্লাহ ও আবদুল্লাহ,পাপ্পু ও সাঈদসহ আরো ২০/২৫জন ১৫/২০টা মোটরসাইকেল নিয়ে মিন্টুর বাসায় মিন্টুকে হত্যার জন্য আসে। বাড়ির দরজা মিন্টুর বাবা মো. আলাউদ্দিন (৫৫) খোলা মাত্র আসামীরা সরাসরি তাকে গুলি করে। গুলিটি মো. আলাউদ্দিনের কোমরে লেগেছিল। এতে মো. আলাউদ্দিন (৫৫) গুরুতর আহত হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ১৫ জানুয়ারি বেলা ২টা ৪০ মিনিটের সময় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মো. আলাউদ্দিন মারা যায়। এদিকে আলাউদ্দিন হত্যা মামলা ঘটনায় ৭নং আসামী করা হয়েছে রাজশাহী মহানগর সেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-আহবায়ক মো: সাইদ আলীকে। যা নিয়ে রাজশাহীর রাজনৌতিক অঙ্গনে চলছে উত্তেজনা।
এ হত্যাকান্ডের সময় রাজশাহী মহানগর সেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-আহবায়ক মো: সাইদ আলীর অবস্থান সম্পর্কে একটি ভিডিও এসেছে প্রতিবেদকের কাছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে ঘটনার দিন ১৪ই জানুয়ারি রাত্রি ১০টা ৫৮মিনিট থেকে রাত্রি ১টা ২৬ মিনিট পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মটরসাইকেল দূর্ঘটনায় আহত সেচ্ছাসেবক দলের কর্মী রাব্বিলকে দেখতে হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন সেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-আহবায়ক মো: সাইদ আলী। তাহলে প্রশ্ন কেন, বা কারা এ হত্যা মামলায় মহানগর সেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-আহবায়ক মো: সাইদ আলীকে আসামী করলেন?
মামলার বাদি নিহত মো. আলাউদ্দিনের ছেলে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন মিন্টু বলেন, পবা উপজেলার ভুগরইল এলাকায় দুপক্ষের টাকা-পয়সা নিয়ে একটা বিরোধ ছিল। এর মীমাংসার জন্য উভয়পক্ষ গত ১৪জানুয়ারি রাতে এয়ারপোর্ট থানায় বসেছিলাম। একপক্ষের একটি ছেলে বিএনপি নেতা আমার ‘ছোট ভাই’। এ জন্য আমিও গিয়েছিলাম। থানায় মীমাংসাও হয়ে যায়। এরপর আমি বাড়ি ফিরে আসি। এর আধাঘণ্টা পরই আমার বাড়ি লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়। হত্যা করা হয় আমার পিতাকে।
এ হত্যা মামলায় ৭নং আসামী রাজশাহী মহানগর সেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-আহবায়ক মো: সাইদ আলী ঘটনার সময় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছিলেন যার সিসি টিভি ফুটেজ আমাদের গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে সংরক্ষীত আছে। এ ক্ষেত্রে ৭নং আসামীকে আপনার পিতার হত্যাকারী মনে করছেন কি? এমন প্রশ্নে মিন্টু বলেন, আমার পিতাকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার চাই। আমরা কোন নিরপরাধ ব্যাক্তিকে হয়রানী করবো না। যদি ৭নং আসামী আমার পিতার হত্যার সাথে জড়িত না থাকে তাহলে তার বিষয়ে পরবর্তি ব্যাবস্থা পুলিশ নেবে।
রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডা. শংকর কে বিশ্বাস বলেন, মো. আলাউদ্দিন (৫৫)কে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ১৫জানুয়ারি রাত্রী ১টা ৩০মিনিটের সময় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। এরপর তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। সেখানে অপারেশন চলা অবস্থায় তিনি মারা গেছেন।
শাহমখদুম থানার ওসি মাহবুব আলম বলেন, আলাউদ্দিন হত্যা ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় ৭জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।’
৭নং আসামী ঘটনার সময় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছিলেন যার সিসি টিভি ফুটেজ আমাদের গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে সংরক্ষীত আছে। এ ক্ষেত্রে ৭নং আসামীকে আপনারা হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে দেখছেন কি এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সিসি টিভি ফুটেজ এর বিষয় আমরা অবগত নই। আপনার কাছে শুনলাম। যদি কোন ব্যাক্তি নিরপরাধ হয় তাকে কোন ভাবে আমরা অপরাধী বানাবো না। এ পর্যন্ত কেউ আটক হয়েছেন কি না জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘আমরা তদন্তের স্বার্থে এটা বলছি না।