মো. জনি হাসান:
শিশুশ্রম একটি জটিল এবং দুঃখজনক বাস্তবতা যা বাংলাদেশে বহু বছর ধরে বিদ্যমান। বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও সামাজিক কারণের কারণে শিশুশ্রম এই দেশে বিশেষভাবে প্রচলিত। সমাজে দরিদ্রতার কারণে শিশুদের কাজে নামানো হচ্ছে, যা তাদের অধিকার, শিক্ষা এবং স্বাভাবিক জীবনের পথে বাধা সৃষ্টি করছে।
বাংলাদেশে শিশুশ্রমের প্রধান কারণ হলো অর্থনৈতিক দুর্বলতা। বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে পরিবারগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ থাকে। ফলে অনেক অভিভাবকই তাদের শিশুদের স্কুলে পাঠানোর পরিবর্তে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন। তাদের আশা থাকে যে সন্তানরা কাজ করে পরিবারের অর্থনৈতিক বোঝা কমাবে। এছাড়াও, অনেক ক্ষেত্রে অভিভাবকরা শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন না থাকায় শিশুরা অল্প বয়সেই শ্রমবাজারে প্রবেশ করে।
বিভিন্ন ধরনের কাজ যেমন- গার্মেন্টস, ইটভাটা, কৃষিকাজ, চা বাগান, দোকানে সহকারীর কাজ ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলোতে প্রচুর সংখ্যক শিশু শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে। তাদের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া, ঝুঁকিপূর্ণ শিল্প যেমন চামড়াশিল্প, ধাতুশিল্পেও শিশুরা কাজ করতে বাধ্য হয়। এখানে শ্রমিক হিসেবে নিযুক্ত শিশুদের সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকে না এবং তাদের কাজের সময়ের কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই।
শিশুশ্রম শিশুদের ভবিষ্যতের উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। কাজের চাপ, দীর্ঘ সময়ের কাজ এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকার কারণে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ে। শিশুরা তাদের অধিকার ও শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় এবং তাদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বিকাশের পথে বাধা সৃষ্টি হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে, এসব শিশুরা কৈশোর থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই পরিবার পরিচালনার দায়িত্বে পড়ে এবং ভবিষ্যতে ভালো চাকরির জন্য যথাযথ যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হয়।
বাংলাদেশে শিশুশ্রম রোধে বেশ কিছু আইন রয়েছে। ২০১০ সালের শ্রম আইন অনুযায়ী, ১৪ বছরের নিচে কোনো শিশুকে শ্রমে নিয়োগ করা নিষিদ্ধ। ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সের শিশুদের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ কাজেও নিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া সরকার ও বিভিন্ন সংগঠন শিশুদের অধিকার রক্ষায় নানারকম কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যদিও এই আইন ও কার্যক্রমের কারণে কিছু উন্নতি হয়েছে, তবুও সমস্যাটি সম্পূর্ণভাবে দূর করা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশে শিশুশ্রমের সমস্যা সমাধানের জন্য কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রথমত, দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য সামাজিক সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক সহায়তা বাড়ানো উচিত। এ জন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। একইসাথে শিক্ষার প্রসার বাড়াতে হবে এবং বিনামূল্যে শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে যাতে দরিদ্র পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের পড়াশোনায় আগ্রহী হয়।
অভিভাবকদের শিক্ষার গুরুত্ব বোঝানো এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে শিশুদের কাজে না পাঠিয়ে বিদ্যালয়ে পাঠানোর জন্য উৎসাহিত করা প্রয়োজন। আইন প্রয়োগ আরও জোরদার করতে হবে এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে শিশুশ্রম রোধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
শিশুশ্রম বাংলাদেশে একটি গভীর সামাজিক সমস্যা, যার সমাধান সহজ নয়। তবে সম্মিলিত উদ্যোগ ও সচেতনতা বৃদ্ধি করে এই সমস্যার সমাধানে কিছুটা উন্নতি করা সম্ভব। শিশুদের শিক্ষিত, সুস্থ, এবং মানবিক জীবন নিশ্চিত করতে হলে শিশুশ্রম মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য সকল স্তরের মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রাজিব আলী
পুবালী মার্কেট শিরোইল কাচা বাজার রাজশাহী
মোবাইল : ০১৭১২-৪৫৪৬৮০, ০১৭৮৯৩৪৫১৯৬
মেইল : info@prokashkal.com
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২৪ | সাইট তৈরি করেছে ইকেয়ার