
নিজস্ব প্রতিবেদক:
নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে যেন ঝড় বয়ে যাচ্ছে এক টুকরো কাগজকে ঘিরে। সেটি একটি শিক্ষা সনদ যা দেখেতে সাধারণ কাগজ হলেও, তার ভেতর লুকিয়ে আছে এক চাঞ্চল্যকর গল্প।
অভিযোগ উঠেছে, ভুয়া একটি শিক্ষা সনদ যাচাই-বাছাই না করেই ‘সঠিক’ বলে প্রত্যয়ন দিয়েছেন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এই ঘটনায় বোর্ডজুড়ে শুরু হয়েছে কানাঘুষা, সমালোচনা আর প্রশাসনিক অস্থিরতা।
ঘটনার সূত্রপাত রাজশাহীর পবা সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে। সেখানে কর্মরত দলিল লেখক শাহীন আলীর এসএসসি সনদ যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে। ওই সনদে উল্লেখ ছিল রোল নং ৬২৩৭১৩, রেজিস্ট্রেশন নং ৬১৭৩৮২, পাশের সন ১৯৯৭, বিদ্যালয় দারুশা উচ্চ বিদ্যালয়।
প্রথম দফায় বোর্ডের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে সনদটি “সঠিক” বলে প্রত্যয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হলে অনুসন্ধান শুরু হয়।
একজন সহপাঠীর মুখেই ফাঁস হয়ে যায় সত্য ১৯৯৭ সালে আমরা দু’জনেই অষ্টম শ্রেণিতে পড়তাম। শাহীন আলী তখন কীভাবে এসএসসি পাশ করল?
এই তথ্যের ভিত্তিতে পবা সাব-রেজিস্ট্রার নিজে বোর্ডে গিয়ে পুনরায় যাচাইয়ের অনুরোধ করেন। এবার ডেপুটি কন্ট্রোলার (এসএসসি) মো. মুনজুর রহমান খান যাচাই শেষে প্রত্যয়ন দেন “Verified and found not correct” অর্থাৎ সনদটি ভুয়া।
এ বিষয়ে পবা সাব রেজিস্ট্রার শাহীন আলী বলেন, একজন দলিল লেখকের শিক্ষা সনদ যাচাইয়ের জন্য প্রথমে আমরা অনলাইন ও মোবাইলে চেক করি। সেখানে রোল নম্বর ও রেজিষ্ট্রেশন নম্বরে অন্য কারো নাম আসছিলো। এতেই আমাদের সন্দেহ হয় শিক্ষা সনদটি ভুয়া। অফিশিয়ালি দরকার লিখিত প্রত্যয়ন। এ কারণে শিক্ষা বোর্ডে যাচাইয়ের জন্য দেওয়া হয়। প্রথমে তাঁরা সনদটি সঠিক মর্মে প্রত্যয়ন দিলে সন্দেহ আরও বৃদ্ধি পায়। পরে আমি নিজে স্বশরীলে যাচাইয়ের জন্য যাই। এরপর যাচাই করে ডেপুটি কন্ট্রোলার মঞ্জুর রহমান খান বলেন এটি সঠিক সনদ নয়। ভুয়া সনদ দেওয়া দলিল লেখকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তদন্তে বেরিয়ে আসে বিস্ময়কর তথ্য। অভিযোগ রয়েছে, প্রথমবার যাচাইয়ের সময় শাহীন আলী মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে বোর্ডের তিন কর্মকর্তা রেকর্ড শাখা অফিসার আলমগীর হোসেন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফারজানা লতা ও মিন্টুর সঙ্গে যোগসাজশ করে ভুয়া সনদটিকে ‘সঠিক’ বলে প্রত্যয়ন করান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেকর্ড শাখা অফিসার আলমগীর হোসেন বলেন, “ভুলবশত প্রত্যয়নটি দেওয়া হয়েছিল। পরে আমরাই বুঝতে পারি সনদটি ভুয়া।
একই সুরে কথা বলেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফারজানা লতা।
ডেপুটি কন্ট্রোলার মো. মুনজুর রহমান খান জানান, সনদটি ভুয়া। প্রথমে রেকর্ড শাখার মিন্টু নামের এক কর্মচারীর ভুলে এমন হয়েছে। বোর্ড তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে শিক্ষা বোর্ডের ভেতরেই এখন চলছে তোলপাড়। কর্মকর্তাদের মধ্যে বিরাজ করছে অস্বস্তি, আর বাইরে বাড়ছে প্রশ্নের পাহাড় একটি ভুয়া সনদ কিভাবে ‘সঠিক’ হয়ে গেল? কোথায় ছিল প্রশাসনিক নজরদারি?
বোর্ডের এক অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, এ ধরনের অনিয়ম শিক্ষা বোর্ডের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। প্রয়োজন দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত।
ঘটনাটি এখন রাজশাহীর প্রশাসনিক মহলেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। কেউ বলছেন এটি কেবল একটি সনদের জালিয়াতি নয়, বরং শিক্ষাপ্রশাসনের নৈতিকতার এক ভয়াবহ সংকেত।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর আ.ন.ম. মোফাখখারুল ইসলাম বলেন এ ঘটনা সম্পর্কে পরে আমি অবগত হয়েছি। বিষয়টি জানার পর তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
