
শাহান আলী, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে অবস্থিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাচারী বাড়িতে এক নিরীহ দর্শনার্থীর উপর শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
ভুক্তভোগী মোঃ শাহনেওয়াজ, শাহজাদপুর পৌরসদরের রুপপুর পাড়ার বাসিন্দা এবং মোঃ আমজাদ হোসেনের পুত্র। জানা যায়, ঈদের ছুটিতে স্ত্রী ও ভাতিজাকে নিয়ে গত ৮ জুন বিকেলে রবীন্দ্র কাচারী বাড়ি দর্শনে যান তিনি। প্রবেশ মূল্য দিয়ে টিকিট নিলেও মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের জন্য নেওয়া অর্থের কোনও টোকেন দেওয়া হয়নি। দর্শন শেষে বের হওয়ার সময় মূল ফটকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী মোটরসাইকেলের টিকিট দেখতে চাইলে তা দেখাতে না পারায় কথাকাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে হাতাহাতিতে রূপ নেয় ঘটনাটি।
এরপর কাচারী বাড়ির কাস্টোডিয়ানসহ কর্মচারীরা শাহনেওয়াজকে টেনে হিঁচড়ে অফিসে নিয়ে গিয়ে মারধর করেন বলে অভিযোগ উঠে। লাঠি ও ঘুষি-থাপ্পড়ের মাধ্যমে চলে এই নির্যাতন। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্য এবং স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দ এসে শাহনেওয়াজকে উদ্ধার করেন। ওই রাতেই তিনি শাহজাদপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
ঘটনার সত্যতা জানতে চাইলে শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আছলাম আলী জানান, অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। তিনি বলেন, “এটি এখনো মামলায় রূপ নেয়নি, তদন্ত চলমান রয়েছে।”
এদিকে, মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরও দুই দিন পার হলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয়দের মধ্যে। এরই প্রেক্ষিতে ১০ জুন মঙ্গলবার দুপুরে শাহজাদপুরের সর্বস্তরের মানুষ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে রবীন্দ্র কাচারী বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলে উত্তেজিত জনতা কাস্টোডিয়ানের কার্যালয় ও অডিটোরিয়ামে ভাঙচুর চালায়। এ সময় অডিটোরিয়াম, বিদ্যুৎ ও বাগান পরিচারক মোঃ সিরাজুল ইসলামকেও মারধর করা হয়।
খবর পেয়ে শাহজাদপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মুশফিকুর রহমান এবং থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে শাহনেওয়াজের ভাই সবুজ, হান্নান ও সুমন জানান, “আমার ভাই বিদেশ থেকে ছুটিতে এসে ঘুরতে গিয়েছিল। সামান্য কথার জন্য একজন ভদ্রলোককে যেভাবে মারধর করা হয়েছে, তা কোনো স্বাভাবিক মানুষ করতে পারে না। এই কাস্টোডিয়ান দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নিয়মিত দর্শনার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন, মারধর ও চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাস্টোডিয়ান হাবিবুর রহমান ৮ জুনের ঘটনাকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ বলে স্বীকার করলেও, ভাঙচুর নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অন্যদিকে শাহজাদপুর থানার ওসি আছলাম আলী জানান, অডিটোরিয়ামে ভাঙচুর সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ এখনো পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় সচেতন মহল এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ মনে করছেন, পুলিশের দায়িত্বহীনতা এবং অব্যবস্থাপনার কারণেই এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা ঘটছে। তারা কাস্টোডিয়ান ও সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।