
শাহান আলী, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলার যমুনার দুর্গম কাউলিয়ার চরে খামারিকে নির্মমভাবে হত্যা করে গরু ডাকাতির ঘটনাটি উদ্ঘাটন করেছে সিরাজগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার জেরে আন্তঃজেলা সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং উদ্ধার করা হয়েছে একটি ষাঁড় গরু।
ঘটনার পটভূমি:
গত ২০ মে ২০২৫, সন্ধ্যায় চৌহালী উপজেলার ঘোরজান ইউনিয়নের মুরাদপুর এলাকায় যমুনা নদীর চরে খামারি তারা মিয়া (৬৫) ও তার নাতি ইব্রাহিম খলিল (১৮) রাতে অস্থায়ী ছাপড়ায় গরু পাহারায় ছিলেন। গভীর রাতে ১০-১২ জনের একটি সশস্ত্র ডাকাত দল ঘরে ঢুকে তাদের হাত-পা ও মুখ বেঁধে ফেলে এবং তিনটি গরু লুট করে নেয়। ডাকাতদের নির্মম নির্যাতনে শ্বাসরোধ হয়ে মারা যান তারা মিয়া।
পরদিন সকালে ইব্রাহিম খলিল কোনোমতে হাত খুলে স্থানীয়দের বিষয়টি জানান। তারা এসে তার মিয়ার মৃতদেহ দেখতে পান। এরপর চৌহালী থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা ও ডাকাতির মামলা দায়ের করা হয়।
ডিবি পুলিশের অভিযানে নাটকীয় মোড়:
সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মোঃ ফারুক হোসেনের নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) মোঃ কামরুজ্জামান, পিপিএম-সেবা ও ডিবি ওসি মোঃ একরামুল হোসাইন, পিপিএম-এর নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতদের পরিচয়:
১. মোঃ ইউসুফ আলী (২৮), বেলকুচি, সিরাজগঞ্জ
২. মোঃ শাহ আলম (৪০), কালিহাতী, টাঙ্গাইল
৩. মোঃ হাসান মণ্ডল (২৫), চর কুমলি, টাঙ্গাইল
৪. মোঃ আমির হোসেন (৪৫), চর কুমলি, টাঙ্গাইল
৫. মোঃ শাহিদ ওরফে সাঈদ (৪১), ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল
৬. মোঃ আঃ মালেক (২৮), খয়াপাড়া, সিরাজগঞ্জ
৭. মোঃ ইসমাইল ব্যাপারী (৫৩), ধুলবাড়ী, টাঙ্গাইল
ডাকাতদের ভয়ংকর স্বীকারোক্তি:
আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, তারা সংঘবদ্ধভাবে দুইটি নৌকায় করে মোট ১৭-১৮ জন মিলে চরে এসে হামলা চালায়। তারা মিয়া ও ইব্রাহিমকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বেঁধে ফেলে, তিনটি গরু নিয়ে নৌকায় করে পালিয়ে যায়। পরে পুংলী ঘাটে গরুগুলো ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে এবং প্রত্যেকে মাত্র ৫ হাজার টাকা করে ভাগ নেয়।
পুলিশ সুপারের বক্তব্য:
সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মোঃ ফারুক হোসেন বলেন,
“এটি ছিল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ও সংঘবদ্ধ ডাকাতি। ডিবি পুলিশের পেশাদারিত্ব ও গোয়েন্দা দক্ষতার ফলেই দ্রুততম সময়ে মামলার রহস্য উদ্ঘাটন সম্ভব হয়েছে। এখনো পলাতক অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।”
জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া:
এই সাফল্যে এলাকাবাসী গভীর সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন। তারা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আরও সক্রিয় থাকবে।