আজ- সোমবার, ২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
Home সম্পাদকীয় কে প্রকৃত বীর-পাইলট না সেই দুই শিক্ষিকা!

কে প্রকৃত বীর-পাইলট না সেই দুই শিক্ষিকা!

by Prokash Kal
২৬৩ views

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় আমরা শুধু ধ্বংসস্তুপই দেখি নি, বরং অগণিত পরিবার শোকস্তব্ধ ও অন্ধকারে ডুবে গেছে। রাজধানীর উত্তরার আকাশে ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক ঘটনায় প্রশ্ন ওঠে-প্রকৃত বীর কারা?

একজন যুদ্ধজাহাজের ক্যাপ্টেন যেমন তাঁর নাবিকদের জীবন রক্ষাকে সর্বোচ্চ দায়িত্ব মনে করেন, তেমনি একটি প্রশিক্ষণ বিমানের পাইলটেরও থাকা উচিত ছিল সাধারণ মানুষের জীবন ও নিরাপত্তাকে সর্বাগ্রে রাখা। কিন্তু বাস্তবে আমরা যা দেখেছি তা ভিন্ন।

পাইলট ইজেক্ট করলেও নিজেকে বাঁচাতে পারেননি। তাঁর দেহ পাশের একটি সরকারি ভবনের টিনের ছাদ ভেদ করে পড়ে; পরবর্তীতে তিনি মারা যান। হয়তো যদি তিনি বিমানের ভেতর থাকতেন, তাকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হতো। তবে এই বাঁচার চেষ্টা বহু শিশুর প্রাণের বিনিময়ে হয়েছে।

প্রশ্ন থেকে যায়, কেন বিমানের নিরাপদ মুক্ত জলাশয়, নদী বা খালি মাঠের বদলে সরাসরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর বিমান নিয়ে যাওয়া হলো? মাত্র কয়েকশ মিটার দূরে বিরুলিয়া, আশুলিয়া, তুরাগ নদী এবং বিশাল ইজতেমা মাঠ ছিল, যেখানে হতাহতের ঝুঁকি ছিল অনেক কম।

অনেকের ধারণা, এটি পাইলটের প্রথম ‘সোলো ফ্লাইট’ ছিল। হয়তো ক্যারিয়ার রক্ষার মরিয়া চেষ্টা তাঁকে এভাবে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছিল। কিন্তু নিজের স্বার্থে অন্যের প্রাণবাজি দিয়ে কতটুকু নৈতিকতা বজায় থাকে, তা বড় প্রশ্ন।

দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানোদের মধ্যে বিশেষভাবে স্মরণীয় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষিকা-মাহরীন চৌধুরী ও মাসুকা বেগম। মৃত্যুর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁরা তাদের ছাত্রছাত্রীদের বুকে ঢেকে রেখেছিলেন। তাঁদের চোখে ছিল ভয়, কিন্তু পলায়নপরতা ছিল না। তারা চেয়েছিলেন শিশুরা বেঁচে থাকুক, ভবিষ্যত গড়ে উঠুক।

এই দুই শিক্ষিকাই প্রকৃত বীর, যাঁরা নিজের প্রাণ দিয়ে অন্যের প্রাণ বাঁচানোর মহান উদাহরণ স্থাপন করেছেন। রাষ্ট্র ইতোমধ্যে তাঁদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে-একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবিক ও নৈতিক স্বীকৃতি।

অন্যদিকে, একজন পাইলট হয়তো জীবনের জন্য লড়েছেন, কিন্তু তার দায়িত্ববোধের পরীক্ষা তিনি উত্তীর্ণ হননি। জীবন বাঁচাতে গিয়ে কতশত শিশুর জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারা মানসিক ও নৈতিক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে তাকে।

আজ আমরা বলি-বীরত্ব শুধু বেঁচে থাকার সাহস নয়, বরং অন্যের জীবন বাঁচানোর দায়বদ্ধতা ও আত্মত্যাগ। এই বাস্তবতা আমাদের সকলকে স্মরণ করিয়ে দেয়, প্রকৃত বীরের পরিচয় কী।

অতএব, এই ঘটনাটি শুধু শোকের নয়, একটি শিক্ষাও-দায়িত্ববোধ ও মানবতার মূল্যায়নের। আমাদের উচিত শ্রদ্ধা জানানো সেই শিক্ষিকাদের প্রতি, যাঁরা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে অন্যকে বাঁচিয়েছেন।

You may also like

Leave a Comment

শিরোনাম:

সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রাজিব আলী

পুবালী মার্কেট শিরোইল কাঁচা বাজার রাজশাহী

মোবাইল : ০১৭১২-৪৫৪৬৮০, ০১৭৮৯৩৪৫১৯৬

মেইল : info@prokashkal.com

© ২০২৪ প্রকাশকাল সর্বসত্বাধিকার সংরক্ষিত