
নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীর চারঘাটে বড়াল নদীর উৎসমুখ ও স্লুইসগেট পরিদর্শন করতে এসে এক অস্বাভাবিক ও বিতর্কিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ও পরিবেশ আন্দোলনের অগ্রসেনানী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। নদী রক্ষায় সরকারের উদ্যোগের অংশ হিসেবে আয়োজিত এই সফরে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সফরের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়ায় এক মামলাভুক্ত আসামির সরব উপস্থিতি।
চারঘাট থানায় দায়ের হওয়া বিস্ফোরণ মামলার (মামলা নং: ৪/১০৮) প্রধান আসামি আদিল-যার বিরুদ্ধে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ফেস্টুন ছেঁড়া, পদদলন, বিএনপি নেতার বাড়িতে গুলি, ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ রয়েছে-তিনি প্রকাশ্যে উপদেষ্টার হাতে ফুল তুলে দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। মুহূর্তেই ঘটনার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং স্থানীয় মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসা: জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, “উপদেষ্টা মহোদয়ের সফর উপলক্ষে সর্বোচ্চ প্রশাসনিক প্রস্তুতি ছিল। কারা উপস্থিত থাকবে বা ফুল দেবে, তা আয়োজকদের এখতিয়ার। তবে কোনো মামলাভুক্ত ব্যক্তি উপস্থিত থাকলে তা খতিয়ে দেখা হবে।”
চারঘাট-বাঘা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: খালেদ হাসান বলেন, “সরকারের পরিবেশ ও নদী রক্ষা কার্যক্রম একটি সার্বজনীন প্রয়াস। কিন্তু কোনো বিতর্কিত বা মামলাভুক্ত ব্যক্তি এতে যুক্ত হলে, তা অনাকাঙ্ক্ষিত। বিষয়টি যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
চারঘাট মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মিজানুর রহমানের ফোন রিসিভ না হওয়ায় তাঁর মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
অভিযুক্ত আদিল বলেন, “আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি কোনো সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িত নই। পরিবেশ রক্ষার মহান উদ্দেশ্যে উপদেষ্টাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছি-এতে দোষের কিছু দেখি না। মামলাটিও আপস হয়ে গেছে।”
তবে মামলার বাদী, চারঘাট পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেন্টু চৌধুরী বলেন, “এই মামলার কোনো আপস বা মিমাংসা হয়নি। চারঘাট থানা শুরুতে মামলা নিতে গড়িমসি করলেও পরে নিয়েছে। অথচ আসামি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাকে গ্রেফতারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। আমি এই সন্ত্রাসী আদিলের গ্রেফতার দাবি করছি।”
ঘটনার জেরে চারঘাটের রাজনৈতিক অঙ্গন ও সচেতন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তাদের মতে, সরকারের নৈতিক ও মহৎ পরিবেশ রক্ষা উদ্যোগে এক মামলাভুক্ত আসামির উপস্থিতি পুরো উদ্যোগের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “নদী রক্ষা শুধু প্রকৃতি রক্ষার বিষয় নয়, এটি ন্যায়ের প্রতিফলনও। যাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ রয়েছে, তারা কীভাবে রাষ্ট্রীয় অতিথিকে সামনে গিয়ে নিজেকে সম্মানজনকভাবে তুলে ধরতে পারে?”
স্থানীয়দের মতে, পরিবেশ রক্ষায় প্রযুক্তি ও প্রশাসনিক পরিকল্পনার পাশাপাশি অংশগ্রহণকারীদের নৈতিক অবস্থানও হতে হবে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য।বিস্ফোরণ মামলার আসামির ফুলে পরিবেশ উপদেষ্টাকে শুভেচ্ছা