
শাহান আলী, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার জুগ্নীদহ তাহফিজুল কুরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসায় একাধিক আবাসিক শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগে ওই মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ মো. আব্দুল মুন্নাফকে আটক করেছে পুলিশ। তিনি উপজেলার গাড়াদহ বাজারপাড়ার বাসিন্দা মো. মোজাম্মেল হকের ছেলে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার দিবাগত রাতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে শাহজাদপুর থানা পুলিশ তাকে আটক করে। অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে আবাসিক শিক্ষার্থীদের বলাৎকার করতেন অভিযুক্ত মুন্নাফ। ভয় দেখানোর জন্য তিনি ভুক্তভোগীদের গলায় দা ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দিতেন, যাতে তারা কাউকে কিছু বলতে না পারে।
এ ঘটনার পর রবিবার রাতে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষ গা-ঢাকা দেয়। অন্যদিকে আতঙ্কে অনেক শিক্ষার্থী মাদ্রাসা ছেড়ে চলে যায়। ভুক্তভোগীদের একজনের পিতা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।
শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আছলাম আলী জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মুন্নাফ একাধিক শিক্ষার্থীকে বলাৎকার করার কথা স্বীকার করেছে। সে দাবি করেছে, “শয়তান ভর করায়” এমন কাজ করেছে। এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে এবং মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি হিফজ বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী মাদ্রাসায় যেতে অনীহা প্রকাশ করলে অভিভাবকরা কারণ জানতে চাইলে তারা বিষয়টি খুলে বলে। এরপর শতাধিক মানুষ রাতেই মাদ্রাসায় গিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এসময় উত্তেজিত জনতা মাদ্রাসার দুজন শিক্ষককে মারধরও করে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অভিভাবক ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক মুন্নাফ এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা মাদ্রাসার সুপার ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি-সদস্যদের বিষয়টি জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। বরং উল্টো ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে এলাকা ছাড়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী মো. আব্দুল্লাহ ও সামিউল ইসলাম জানান, কিছুদিন আগে গভীর রাতে তাদের ছোট এক সহপাঠীকে জোরপূর্বক রুমে নিয়ে যায় শিক্ষক মুন্নাফ। তারা টিনের বেড়ার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিয়ে ওই অনৈতিক কাজের দৃশ্য দেখেন। বিষয়টি টের পেয়ে মুন্নাফ বাইরে এসে তাদের গলায় দা ঠেকিয়ে চুপ থাকার হুমকি দেন।
এ ঘটনার পর মাদ্রাসার শিক্ষক মুন্নাফকে আটক করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। স্থানীয়রা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।