
শাহান আলী, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, কার্যালয় ভাঙচুর ও মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগে বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে উত্তরবঙ্গ ট্যাংক লরি শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা। রবিবার (৩১ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলে। এতে বগুড়া-নগরবাড়ি মহাসড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে পড়ে এবং উভয় পাশে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
হঠাৎ অবরোধে আটকা পড়ে দুর্ভোগে পড়েন শত শত যাত্রী, অফিসগামী মানুষ, ব্যবসায়ী ও সাধারণ পথচারীরা। কেউ কেউ গাড়ি ছেড়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হন। বিশেষ করে গরমে নারী-শিশু ও বয়স্কদের দুর্ভোগ ছিল চোখে পড়ার মতো।
অবরোধ চলাকালে উত্তরবঙ্গ ট্যাংক লরি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আজিজুর রহমান গ্যাদা ও সাধারণ সম্পাদক রমজান আলী শেখ অভিযোগ করেন, স্থানীয় পোতাজিয়া ইউনিয়ন বিএনপির নেতারা দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিক ইউনিয়নের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছে। গত শনিবার রাতেও তারা মদ্যপ অবস্থায় সংগঠনের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায়। শুধু তাই নয়, অতীতে একাধিকবার মিথ্যা মামলা দিয়ে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হয়েছে।
তাদের অভিযোগ, বিএনপি নেতাদের এই চাঁদাবাজি ও দমননীতির প্রতিবাদেই শ্রমিকরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে পোতাজিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বাঘাবাড়ি নদী বন্দরের ইজারাদার মো. আনিসুর রহমান বলেন, “এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আওয়ামী লীগের ইন্ধনে শ্রমিক ইউনিয়নের কিছু নেতা আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।”
তিনি দাবি করেন, মূল ঘটনা হলো বাঘাবাড়ির বড়াল নদীতে নৌকা বাইচ আয়োজনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা আওয়ামী লীগ নেতা রতনকে প্রধান অতিথি করে এককভাবে নৌকা বাইচ আয়োজন করতে চাইলে বিএনপি এর বিরোধিতা করে যৌথভাবে আয়োজনের প্রস্তাব দেয়। এ নিয়েই বিতর্ক তৈরি হয়। “তুচ্ছ এ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে আমাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তোলা হচ্ছে,” যোগ করেন আনিসুর রহমান।
অবরোধ চলাকালে মহাসড়কে আটকে পড়া গাড়ির চালক ও যাত্রীরা চরম হতাশা প্রকাশ করেন। যাত্রীরা জানান, হঠাৎ করে মহাসড়ক বন্ধ করে দেওয়ায় তাদের দীর্ঘ সময় রাস্তায় বসে থাকতে হয়েছে।
পরে পুলিশ ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হয় এবং অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। দুপুর দেড়টার পর থেকে ধীরে ধীরে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে থাকে।
ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় যাতে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি না ঘটে। শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল। শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।”
এই ঘটনায় স্থানীয় রাজনীতিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা ন্যায়সঙ্গতভাবে চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করেছে। অন্যদিকে বিএনপি নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের ইন্ধনে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্যই এই নাটক সাজানো হয়েছে।
বাঘাবাড়ি এলাকায় বর্তমানে আওয়ামী লীগপন্থী শ্রমিক সংগঠন এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।