
শাহান আলী,শাহজাদপুর সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে অবস্থিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের দাবিতে রাজপথে নেমেছেন। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও এখনও পর্যন্ত কোনো স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হলেও আজ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা অস্থায়ী ক্যাম্পাসে পাঠদান নিচ্ছেন, যা তাদের শিক্ষাজীবনে নানামুখী সংকট তৈরি করছে।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পরেও যেসব বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তারা ইতোমধ্যে নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য সরকারিভাবে অর্থ বরাদ্দ পেয়েছে। অথচ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত এই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়টি আজও অবহেলার শিকার। এটি শুধু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অবিচার নয়, বরং দেশের বিপ্লবী ছাত্রসমাজের স্বার্থেও এক ধরণের অবজ্ঞা।
তারা আরও জানান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জমিদারির খাস জমিতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। পরিবেশের কোনো ক্ষতি ছাড়াই সেখানে একটি দৃষ্টিনন্দন স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ সম্ভব। ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কোনো জটিলতাও নেই। এরপরও কেন ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদিত হচ্ছে না, তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে সাতবার উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সংশোধন করেছে এবং সর্বশেষ ৫১৯.১৫ কোটি টাকার ডিপিপি একনেক সভায় উপস্থাপন করে। গত ৭ মে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) ওই সভায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
একনেক সভায় প্রায় সবাই প্রকল্প অনুমোদনের পক্ষে মত দিলেও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রস্তাবিত স্থানে সরেজমিন পরিদর্শনের আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি গত ১৬ জুন শাহজাদপুরের বুড়ি পোতাজিয়া এলাকায় প্রস্তাবিত স্থান ঘুরে দেখেন এবং একটি প্রতিবেদন জমা দেন। তবে সেই প্রতিবেদনে কী বলা হয়েছে, তা এখনো শিক্ষার্থীদের জানানো হয়নি।
শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তোলেন, প্রধান উপদেষ্টার ইতিবাচক মনোভাব এবং উপদেষ্টার পরিদর্শনের পরেও কেন একাধিক একনেক সভা অনুষ্ঠিত হলেও প্রকল্পটি এখনও অনুমোদিত হয়নি? বিষয়টি ইচ্ছাকৃত উপেক্ষা কি না, তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সন্দেহ দানা বেঁধেছে।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা স্পষ্টভাবে জানান, শ্রেণিকক্ষ, আবাসন, নিরাপত্তা সংকটসহ নানাবিধ সমস্যায় তারা প্রতিনিয়ত ভুগছেন। শিক্ষক-কর্মচারীরাও একই ভোগান্তির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। স্থায়ী ক্যাম্পাস ছাড়া একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যেমন চলতে পারে না, তেমনি শিক্ষার্থীদের মানসিক ও একাডেমিক উন্নয়নও সম্ভব নয়।
শিক্ষার্থীদের ঘোষণা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথেই থাকবেন। আন্দোলন অব্যাহত থাকবে এবং প্রয়োজনে আরও তীব্র হবে। যতক্ষণ না রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের অবস্থান কর্মসূচি চলবে বলেও জানান তারা।