আজ- বুধবার, ১লা অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
Home রাজশাহী বিএমডিএ’র ৫৯জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলির অভিযোগ নির্বাহী পরিচালকের বিরুদ্ধে!

বিএমডিএ’র ৫৯জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলির অভিযোগ নির্বাহী পরিচালকের বিরুদ্ধে!

by Prokash Kal
৭৬ views

নিজস্ব প্রতিবেদক :

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (বিএমডিএ) চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। সাবেক নির্বাহী পরিচালক (ইডি) শফিকুল ইসলামকে অফিস ছাড়ার পর, বাধ্যতামূলক অবসর, বরখাস্ত, শোকজ ও মনগড়া তদন্ত কমিটি গঠনসহ নানা প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে এবং সেচ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

গত ৭ এপ্রিল নতুন ইডি হিসেবে অতিরিক্ত সচিব তরিকুল আলমকে নিয়োগ দিলেও এতে অসন্তোষ প্রমানিত হয়নি। কর্মকর্তাদের দাবি, বিএমডিএ প্রকৌশলভিত্তিক সংস্থা হওয়ায় প্রশাসনের কর্মকর্তারা এই পদে অনুপযুক্ত।

এদিকে, এক প্রকৌশলীর বাধ্যতামূলক অবসর ও দুজনের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করেছেন উচ্চ আদালত। একইসঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে গঠন করা একটি তদন্ত কমিটির কার্যক্রমও স্থগিত করা হয়েছে।

যে কারণে উত্তেজনা:-
২০২৩ সালের জুলাইয়ে ইডি নিযুক্ত হওয়া শফিকুল ইসলামকে গত ফেব্রæয়ারিতে রেশম উন্নয়ন বোর্ডে বদলি করা হয়। কিন্তু তিনি অফিস ছাড়তে না চাইলে ২৩ মার্চ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি দল তাকে দপ্তর ত্যাগে বাধ্য করেন। পরে তিনি ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৬০ জনকে আসামি করেন।

এই ঘটনার জেরে একজন তত্ত¡বাবধায়ক প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়, দুজন প্রকৌশলীকে বরখাস্ত করা হয় এবং আরও আটজনকে শোকজ করা হয়। যা গত ৮ এপ্রিল তাদের হাতে পৌঁছায়। একের পর এক এই পদক্ষেপের ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও অনিয়মের অভিযোগ:-
শফিকুল ইসলামকে আওয়ামী লীগপন্থী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সরকারের পরিবর্তনের পর তিনি দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও বদলি করতেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও তিনি দয়িত্ব হস্তান্তর করার পরও দূর্নীতির মাধ্যমে ৫৯ জনকে বদলি করেছেন।

বদলি ও পক্ষপাতের অভিযোগ;-
ইডির বদলির পরও তিনি একাধিক কর্মকর্তাকে বদলি করেন, যা সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়িয়ে তোলে। যারা আগের সরকারের আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন, তাদেরকে পুরস্কৃত করা হয়, আর বিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

সূত্রমতে, বদলির আদেশের পরও ইডি শফিকুল গত ১৩ মার্চ দুটি আদেশে ২৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করেন। এর আগে ১৮ ফেব্রুয়ারী আরও দুই আদেশে ২৭ জনকে বদলি করা হয়। আর যেসব কর্মচারী জুলাই আন্দোলন দমনে সরাসরি লাঠি হাতে মাঠে নামেন, তাদের বহাল রাখা হয়। ইডির বদলির আদেশের পর মাহফুজুর রহমান কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাদের ডেকে মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদনপত্র পাঠানোর নির্দেশনা দেন। এতে শফিকুল ইসলামকে বিএমডিএতেই রাখার দাবি জানাতে বলা হয়।

এসব বিষয় নিয়ে শফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে বিএমডিএর ভারপ্রাপ্ত সচিব এনামুল কাদির বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কিছুটা অস্থিরতা রয়েছে, তবে এ বিষয়ে মন্তব্য করা এখনই ঠিক হবে না। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের অধীন।

তত্ত¡বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমানের প্রভাবের কথাও উঠে এসেছে, যিনি বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের রাজশাহী অঞ্চলের নেতা। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ইডির ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে দপ্তর চালাতেন এবং বিভিন্ন টেন্ডার অনিয়মে জড়িত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে গত ডিসেম্বরে সেচ প্রকল্পের টেন্ডারে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। টেন্ডারের গোপন তথ্য ফাঁসের ঘটনায় তদন্তের বদলে ইডি টেন্ডার বাতিল করেন।

গত ৯ ডিসেম্বর ভ‚-গর্ভস্থ সেচনালা বর্ধিতকরণের মাধ্যমে সেচ এলাকা সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ৯৫টি লটের বিপরীতে দরপত্র আহবান করা হয়েছিল। এই টেন্ডারের অন্তত ৩০টি লটের গোপন দরপত্র পিডি শহীদুর রহমান তৎকালীন ইডি শফিকুলের নির্দেশে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমানকে জানিয়ে দেন বলে অভিযোগ আছে। বিষয়টি জানাজানি হলে পিডি শহীদুর রহমান শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন।

এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান ড. এম আছাদুজ্জামান ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিখিতভাবে বিষয়টি ইডিকে অবহিত করেন। কিন্তু ইডি কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে দ্রæত টেন্ডার বাতিলের ব্যবস্থা করেন।

মনগড়া তদন্ত কমিটি করা অভিযোগ:-
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) আওয়ামীপন্থি সদ্য সাবেক নির্বাহী পরিচালক শফিকুল ইসলামকে দপ্তর ছাড়তে বাধ্য করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংস্থার চেয়ারম্যান ড. এম আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে ‘মনগড়া’ তদন্ত কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে। বিএমডিএ পরিচালনা বোর্ডের সদস্য সাইফুল ইসলাম হীরক এ অভিযোগ তুলেছেন।

হীরকের দাবি, কৃষি উপদেষ্টা ও বিএমডিএ বোর্ড সদস্য জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নির্দেশনা অনুযায়ী তাকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের কথা ছিল। কিন্তু উপদেষ্টার নির্দেশ অমান্য করে চেয়ারম্যান নিজ উদ্যোগে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।

এই বিষয়ে চেয়ারম্যানকে ১০ এপ্রিল চিঠি দিয়েছেন হীরক। তিনি চিঠিতে লেখেন, “২৩ মার্চ নির্বাহী পরিচালকের সঙ্গে এক অনভিপ্রেত ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন কৃষি উপদেষ্টা। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আমাকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠনের কথা ছিল।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ২ এপ্রিল চেয়ারম্যান হোয়াটসঅ্যাপে একটি সভার আমন্ত্রণ জানান। তবে পরে জানা যায়, তিনি ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য ঠাকুরগাঁও চলে যান। এরপর ৮ এপ্রিল হীরক জানতে পারেন, ৩ এপ্রিল একটি তদন্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং ১০ এপ্রিল আরেকটি সভা ডাকা হয়েছে।

এই প্রক্রিয়াকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেখ করে হীরক জানান, তিনি ১০ এপ্রিলের সভায় অংশ নেননি। পাশাপাশি, ‘তথাকথিত’ ও ‘পরিকল্পিত’ তদন্ত কমিটি বাতিল করে কৃষি উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।

চেয়ারম্যানের ব্যাখ্যা:
কৃষি উপদেষ্ঠার নির্দেশনা অমান্য করে তদন্ত কমিটির গঠনের অভিযোগের ব্যাখ্যা দিয়েছেন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ড. এম. আসাদুজ্জামান। বৃহস্পতিবার রাতে এক বিবৃতিতে তিনি তদন্ত কমিটি গঠন নিয়ে ব্যাখ্যা দেন।

যাতে তিনি উল্লেখ করেছেন, বিএমডিএ, প্রধান কার্যালয় দপ্তর স্মারক নং-২৮৯৯ তারিখঃ ২৫/০৩/২০২৫ খ্রি. মোতাবেক মোঃ সাইফুল ইসলাম হীরককে আহবায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। পরবর্তীতে গত ২৭/০৩/২০২৫ খ্রি. তারিখে কৃষি উপদেষ্টা মহোদয় এর কক্ষে উদ্ভুত ঘটনার বিষয়ে আলোচনায় কৃষি সচিব উত্থাপন করেন যে, মোঃ সাইফুল ইসলাম হীরককে আহবায়ক করে কমিটি গঠন করা হলে জেলা প্রশাসক, রাজশাহী ও পুলিশ সুপার, রাজশাহী তাঁর ডাকে আসবেন না। অতঃপর মন্ত্রণালয় কর্তৃক কৃষি মন্ত্রণালয় স্মারক নং-১০৪ তারিখঃ ২৭/০৩/২০২৫ খ্রি. মোতাবেক একজন অতিরিক্ত সচিবকে আহবায়ক করে কমিটি গঠিত হয়েছে। এছাড়াও উপদেষ্টা মহোদয় বোর্ড সদস্যদের নিয়ে কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে ঘটনা তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন জমাদানের নির্দেশ দেন।

তিন প্রকৌশলীর বরখাস্তের আদেশ স্থগিত:
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) এক প্রকৌশলীর বাধ্যতামূলক অবসর ও দুজনের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করেছেন উচ্চ আদালত। একইসঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে গঠন করা একটি তদন্ত কমিটির কার্যক্রমও স্থগিত করা হয়েছে। গত ৯ এপ্রিল বিচারপতি রাজিক-আল-জলিল ও বিচারপতি তামান্না রহমান খালিদির বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এর আগে গত ২৫ মার্চ বিএমডিএ’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খানকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। এছাড়া নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম রেজা ও সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে ২৭ মার্চ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কৃষি মন্ত্রণালয়। উচ্চ আদালত এই বাধ্যতামূলক অবসর, সাময়িক বরখাস্ত ও তদন্ত কমিটি গঠনের মন্ত্রণালয়ের আদেশ স্থগিত করেছেন।

বিএমডিএ’র ওই তিন প্রকৌশলীর আইনজীবি ফরিদুল ইসলাম জানান, যেসব স্মারকে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীকে বাধ্যতামূলক অবসর, দুই প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত ও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল; সেসব স্মারকের আদেশগুলো উচ্চ আদালত ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। পাশাপাশি তদন্ত কমিটি পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করছিল, এটি উচ্চ আদালতকে জানানো হয়েছে। তাই তদন্ত কমিটি গঠনের আদেশও স্থগিত করা হয়েছে।

You may also like

Leave a Comment

শিরোনাম:

সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রাজিব আলী

পুবালী মার্কেট শিরোইল কাঁচা বাজার রাজশাহী

মোবাইল : ০১৭১২-৪৫৪৬৮০, ০১৭৮৯৩৪৫১৯৬

মেইল : info@prokashkal.com

© ২০২৪ প্রকাশকাল সর্বসত্বাধিকার সংরক্ষিত